দরমার-বেড়া.md
দরমার-বেড়া.md
এখন মধু আনতে যাওয়া বারণ। পঞ্চায়েতের মইদুল এসে চাল, ডাল, আলু, তেল দিয়ে গিয়েছে। আর চোখ পাকিয়ে বলে গিয়েছে, “বেরুবিনি ঘর থিকে। মড়ক লেগিছে। দেশ কে দেশ উজাড় হই যাচ্ছে।” বটতলার কেষ্ট পরে সুবলকে আলাদা ডেকে বলেছে, “মড়ক না। মারি।”
মারি-মড়ক কাকে বলে, সাতাশ বছরের সুবল জানেও না, ভয়ও খায় না। কিন্তু ওই, বাবুরা বলে গিয়েছেন...
মাছ ধরা বারণ হয়ে গিয়েছিল, মধু আনাও... চলবে কী করে! ভাবে সুবল। এ চাল-ডাল ক’দিন খাবে? তার পর? কচুর লতি দিয়ে কাঁড়ার সেদ্ধ? তা, সে-ও না-হয় সে আর কুমু গিলে নেবে। কিন্তু রাসমণি? মাত্র দেড় বছর বয়স যে!
খুব বেশি ভাবে না সুবল। অত ভাবলে সুবলদের বাঁচা মুশকিল। ঘর থেকে কয়েক-পা দূরে ছোট্ট নদীটায় বাসন ধুতে যায় সে। দু’বার সাঁতরালেই ও পার। নিকষ কালো। সুন্দরী গাছেরা হাতছানি দেয় তাকে...
কিশোরীমোহনপুরের ও ধারটায় সুবলের ঘর হলে তবু কথা ছিল। সামনেই ঠাকুরান। এতটাই চওড়া যে, সে পর্যন্ত পেরোতে ডরায়। আর এ পাশে মাতলা থেকে ছিটকে বেরনো এই খাল। এতটাই খাটো যে, সে পেরিয়ে না এলে ধন্দ লাগে। তা, সে পেরোয়... আসেও। গেল মাসেই করালীর বাছুরটাকে নিয়ে গেল। তারও কয়েক দিন আগে শিবুদের দু’টো ছাগল। আর তারও মাস দুয়েক আগে এক রাতে মণ্ডলজ্যাঠাকে...
দেখতে ভারী মিষ্টি তাকে! চোখদু’টো ভাঁটার মত জ্বলে? তা জ্বলুক। না রাগলে পরে ভারী মিষ্টি সে, ভাবে সুবল। বিড়বিড় করে, “নিজের গায়ের জোরটা যদি নিজি একটু বুইঝতিস...” আর অজান্তে নিজের কাঁধে হাত ঠেকায়। বিদ্যাধরীর তলা থেকে লাফ মেরেছিল। নাওয়ের আগে ছিল নকুল, পিছনে সুবল। ছইভর্তি মাছ। ঠিক সময় শরীরটাকে সামনে ঝুঁকিয়ে নিয়েছিল সুবল। সে নাগাল করতে পারেনি, শুধু তার নখগুলো সুবলের কাঁধ চিরে বেরিয়ে গিয়েছিল। নিমেষে জলের মধ্যে তার ঘাড় লক্ষ্য করে সজোরে বৈঠা চালিয়েছিল সুবল। লেগেছিল।
বুক-পিঠ জুড়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা সুবল পরে ভেবেছিল, “আহা, খিদের চোটেই তো...”
তাকে শত্তুর বলে ভাবতে পারে না সুবল। পাশাপাশি বাস। ওই তো খালের ও পার। ওই তো সুন্দরী গাছগুলো, তার পিছনেই... কিন্তু যাওয়া যে বারণ!
সুবল ভেবেছিল ঘরের চার পাশে দরমার দেওয়ালটা এ বার সারিয়ে ফেলবে। বিষ্ণুপদ আড়াই হাজারের বরাত দিয়েছিল। উঠোনের দু’হাত দূরেই কলঘর। সেটার পাল্লাটাও... কিন্তু ও পারে যেতে না দিলে মাছ কই, মধু কই— টাকা কই?
কুমুর চিন্তা অন্য। রাসমণির জন্য একটু দুধ কোথায় পায় সে? হাট বন্ধ। তিনুখুড়োর বিধবা বোন খবর এনেছে, আজকালের মধ্যেই নাকি বাবুরা আবার চাল-ডাল নিয়ে আসবে। একটু দুধও যদি... অবিশ্যি না দিলেই বা কী! জোগাড় হয়ে যাবে। বনবিবির থানের পিছনেই রাসুদের গোয়াল।
কুমুর চিন্তা হয়, দুশ্চিন্তা নয়। পূর্ব গুড়গুড়িয়ার মেয়ে সে। বাপ নদী পার হয়ে কাঠি খুঁচিয়ে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল। আর ফেরেনি। বনবিভাগ বলেছিল, বেআইনি! অবিশ্যি এ সবে তার বিয়ে আটকায়নি। তাকে সম্প্রদান করেছিল গোপেনজ্যাঠা।
আর যার হাতে সম্প্রদান করেছিল, সে এখন তার শরীর জুড়ে আদর করতে ব্যস্ত। কুমু সুবলের মাথাটা চেপে ধরে থাকে তার বুকের মাঝে। বাইরে ঝড় উঠেছে। অন্ধকার ঘরের ভিতর থেকে হাওয়ার শব্দ শুনতে পায় তারা। রাসমণি পাশে শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোয়।
“হাঁড়িতে আর চাল নিকো,” ফিসফিস করে কুমু।
বাইরে বিদ্যুৎ চমকায়। বেড়ার দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে সে আলো ঢুকে আসে ঘরে। তাতে এক ঝলকের জন্য সুবল দেখতে পায় দুটো মায়াবী চোখ। সে কুমুকে আরও জড়িয়ে ধরে বলে, “নিতি আসব।”
আর কুমু দেখে, সেই ভয়ঙ্কর-সুন্দর চারপেয়ের মতোই সুবলের শক্ত পেশিবহুল হাত দু’টো।
বাইরে বাজ পড়ে। আকাশ জল ঢালে মুষলধারে, আর...
...আর ঠিক সেই মুহূর্তেই সুবলের নাকে ধাক্কা মারে একটা গন্ধ।
এ ঘ্রাণ সে চেনে। এ ঘ্রাণ সে আগেও পেয়েছে! অনেক বার, অনেক চড়ায়, অনেক খাঁড়িতে, কখনও বা অনেক গভীরে!
কুমুকে ছেড়ে চকিতে চৌকিতে উঠে বসে সুবল। রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি। গতকালের কালবোশেখিতে তারের খুঁটি উড়ে গিয়েছে। আলো নেই। সবেধন নীলমণি বাল্বটা তাই আজ আর জ্বলবে না।
“কী হল!” হাঁপায় কুমু।
“কিচ্ছুনি... মণিকে নে ভিতর ঘরে যা,” আওয়াজ নামিয়ে আস্তে করে বলে সুবল।
কুমু খানিক ক্ষণ খাটে শুয়ে থেকে কিছু একটা আন্দাজ করে। তার পর অন্ধকারে চৌকি ছেড়ে উঠে কাপড় ঠিক করে। শেষে ঘুমন্ত রাসমণিকে আলগোছে কোলে তুলে নিঃশব্দে ভিতরের ঘরে ঢুকে যায়। এ ঘরটায় মাটির দেওয়াল, উপরে টালি।
সুবল রয়ে যায় বাইরের ঘরে। শক্ত খুঁটিতে তামার তার দিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধা দরমার দেওয়াল। এমন নয় যে এক ধাক্কায় পড়ে যাবে, আবার এমনও নয় যে ধাক্কার পর ধাক্কা সইতে পারবে।
সুবল অন্ধকার ঘরের মাঝখানে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ায়। নাক টেনে শ্বাস নেয়। সেই উগ্র গন্ধ...
নিচু হয়ে চৌকির তলা থেকে গরানের লাঠিগাছা বার করে আনে সে। ঘরের কোণ হাতড়ে দা-টাও খুঁজে পায়। আর বিড়বিড় করে, “এসছিস?”
বাইরে তুমুল হাওয়ার শব্দ। তা ছাপিয়ে হোগলা ছাওয়া খড়ের চালে বৃষ্টির শব্দ। তা-ও ছাপিয়ে দিগ্বিদিক কাঁপিয়ে বাজ পড়ার শব্দ। ভিতরের ঘরে কেঁদে ওঠে রাসমণি। নিমেষের মধ্যে তাকে পায়ে শুইয়ে ফের দুলিয়ে ঘুম পাড়ায় কুমু।
শব্দ নয়, কোনও শব্দ নয়!
সামনের ঘরে এ বার একটা আধপোড়া মোমবাতি জ্বালায় সুবল। এই ঠান্ডা আবহাওয়াতেও মোমের আলোয় তার গায়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম। অতি সন্তর্পণে চৌকির নীচ থেকে তোরঙ্গটা টেনে বার করে আনে সে। ভারী আছে। রাসমণির লেপ-কাঁথা-কম্বল আর কিছু বাসনকোসন। দু’দিকের আংটা ধরে তুলে বন্ধ করা দরজার মুখটায় বসিয়ে দেয় সুবল।
এ ঝোড়ো হাওয়ায় এই ঘর টিকলে হয়। দরমার দেওয়ালগুলো কেঁপে উঠছে বার বার। মোমবাতির হালকা আলোয় খুঁজে ফেরে সুবল, কোনটা হাওয়ার ধাক্কা আর কোনটা...
ঘুরে ঘুরে দেওয়ালে কান পাতে সে। শব্দ— খুব আস্তে— তবু হচ্ছে। কোথায় যেন, কোথায় যেন। কোন পাশ থেকে আসছে? পাশ থেকে? না, উপর থেকে— খচরমচর খচরমচর...
ঘরের মাঝখানে থমকে দাঁড়ায় সুবল। কাঁপছে এই খড়ের চাল। হাতে বেশি সময় নেই। এ চাল মজবুত নয়। কিছু ক্ষণের মধ্যে ফোঁপরা করে ফেলবে। তার পর ওই কঞ্চির কাঠামোটা প্যাঁকাটির মতো ভেঙে...
এক লাফে ভিতরের ঘরে ঢুকে উনুনের পিছন থেকে শাবলটা নিয়ে এ ঘরে চলে আসে সুবল। হালকা মোমবাতির আভায় সে দেখতে পায়, কুমু রাসমণিকে বুকে জড়িয়ে চৌকির এক কোণে বসে রয়েছে। মৃদু হাসি খেলে যায় সুবলের মুখে। ভাবে সে, সুবল কয়ালের মেয়ে রাসমণি। সে জানে কখন আওয়াজ করতে নেই।
বাইরের ঘরে এসে এক লাফে চৌকিতে উঠে দাঁড়ায় সুবল। তার পর কয়েক মুহূর্ত চালের দিকে চেয়ে থেকে একটা জায়গা লক্ষ্য করে মোক্ষম এক ঘায়ে নীচ থেকে শাবলটা ঢুকিয়ে দেয় তার ভিতরে।
বাইরে বাজ পড়ে সে সময়। আরও জোর পায় বৃষ্টি।
উপরে আর কোনও শব্দ নেই। খচরমচরও বন্ধ। পা টিপে টিপে চৌকির ধার ধরে দরমার কাছে এসে দাঁড়ায় সুবল। তার পর উপরের ফাঁক থেকে উঁকি মারে বাইরে। অন্ধকারে চোখ সয়ে আসে তার। উঠোনের কিছুটা আবছা দেখতে পায় সে। তুলসী গাছ, আকন্দ ঝোপ, ঝোড়ো বৃষ্টির ফোঁটা... আর কেউ নেই।
শিকারই তো আজীবন শিকারিকে তৈরি করে এসেছে। এ স্নায়ুও তাকে সেই শিকারই দিয়েছে। মাথার পিছনকার চোখও তার-ই দেওয়া। দরমার দেওয়ালে টাঙানো মুখোশ ঝোলে। ফের বিদ্যুতের আলোয় ঝড়ে দুলতে থাকা দূরে নারকেল গাছের সারিটাকে এক বার দেখতে পায় সে।
ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে কাজ। হাতে শাবলটা বাগিয়ে ধরে সে চৌকি ছেড়ে নেমে আসে। চৌকির উপর রাখা মোবাইলটা খুঁজে পায়। এই অবস্থার মধ্যেই ফোন লাগায় চকমকিকে, জলধরকে, সন্তুকে। কোনও সাড়া পায় না। এই বর্ষায় এই রাতে কেউ জেগে নেই। কাউকে চেঁচিয়ে ডাকারও উপায় নেই। তার আওয়াজ এই বৃষ্টি আর বাজের শব্দ ছাপিয়ে কোথাও পৌঁছবে না।
এ লড়াই হবে একায় একায়।
ধীরে ধীরে আলগোছে আটকানো জানলার ভাঙা পাল্লাগুলো এঁটে ছিটকিনি তুলে দেয় সুবল। দরজায় লাগানো খিলটা এক বার দেখে নেয়। পাল্লাগুলো মজবুত নয়। তায় কাঠ নীচ অবধি নামেনি। তলার কিছুটা, সেই দরমার বেড়া দিয়ে কোনও রকমে ভেজানো।
পরিস্থিতি পেড়ে ফেলেছে তাকে? তাদের তিন জনকে? দূরে বাঁশবন থেকে ভেসে আসা জিনদের ডাক শুনতে পায় সুবল। সে জানে, এখন প্রেত টহল দেয় কিশোরীমোহনপুরের ঘাটে। তবু হাসি ফুটে ওঠে তার মুখে। সব দিক দিয়ে বেঁধে ফেলেছে তাকে? “তাও হয়?” নিজেকেই অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করে সুবল।
কান খাড়া করে থাকে সে। আর তার ফলেই বোধহয়...
একটা চাপা...
একটা চাপা ঘরঘর শব্দ... এত ক্ষণে শুনতে পায় সে।
সুবল আন্দাজ করতে পারে, এই ঘরের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। বাইরে কোনও গরু-ছাগল বাঁধা নেই যে নিয়ে যাবে। ছাদ ফুটো করে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেয়েছে। রাগছে সে... রেগে উঠছে। আর ধৈর্য হারাচ্ছে সে?
হালকা রাগ হয় সুবলেরও। সে বিড়বিড় করে, “বুক চিইতে আয় না, বুক চিইতে আয়। এই তো আমি দাঁইড়ে আছি। অত জোর নে অমন চোরের মতো কেন?”
ডান দিকের দরমার বেড়ার বাইরে আঁচড়ানোর শব্দ পায় সুবল। সে ছিটকে সরে আসে সে দিকে। তার পর ঘরের ভিতর থেকে ধাক্কা মারে দেওয়ালে। মুহূর্তে থেমে যায় সে শব্দ। আবার কিছু ক্ষণ সব চুপচাপ। শুধু বাইরে কালবোশেখির তাণ্ডব।
ঘরের চারপাশে চোখ বোলাতে বোলাতে ফের ফোন করে সুবল। আবারও তোলে না কেউ।
বাইরে তার উপস্থিতি এ বার যেন আরও স্পষ্ট। তার রাগ এ বার চাপা গোঙানির মতো শোনাচ্ছে কি, বোঝার চেষ্টা করে সুবল। ছিলে-ছেঁড়া ধনুকের মতো তার শরীরটা টান হয়ে ওঠে। এখন শুধু চোখ-কানই ভরসা।
রেগে উঠেছে সে। সামনেটায় পায়চারি করছে। ছাদে সুবিধে করতে পারেনি। দেওয়াল দিয়েও আর চেষ্টা করেনি। দরজার বাইরে চলে ফিরে বেড়াচ্ছে সে। ভিতরে সুবল, বাইরে সে। মাঝখানে শুধু দু’টো পুরনো ভাঙা ভিজে কাঠের পাল্লা। তার নীচটা জুড়ে ক্ষয়ে আসা দরমার বেড়া।
সময় বয়ে যায়। চোখে মায়াকাজল পরে যেন তার গতিবিধি লক্ষ করতে থাকে শাবল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সুবল। এমন সময়...
এমন সময় তোরঙ্গটা ঘষটানোর শব্দ পায় সুবল। মোমের আলোয় দরজার মুখ থেকে ওটাকে ভিতর পানে সরে আসতে দেখে। বাইরে থেকে ঠেলছে। চোখ কুঁচকে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থাকে সুবল। তার পর আস্তে করে সে নিজেই দরজায় চাপা দেওয়া মরচে ধরা তোরঙ্গটা নিঃশব্দে ভিতরে টেনে আনে।
বেড়াটা ভেঙেছে। আর সেখান দিয়ে ঢুকে আসছে...
...একটা পাঞ্জা!
ওই পাঞ্জা সে চেনে। ওই পাঞ্জা থেকে বেরিয়ে আসা নখগুলোর ধার সে জানে। সুবলের রক্ত হিম হতে জানে না, কেবল ফুটে ওঠে।
লুঙ্গিটা ল্যাঙটের মতো পেঁচিয়ে বাঁধে সুবল। শাবলটা হাতে ধরে নিঃশব্দে চৌকিতে উঠে দাঁড়ায়। তার পর দরজার তলা ভেঙে ঢুকে আসা ওই পাঞ্জা লক্ষ্য করে শাবল উঁচিয়ে বিদ্যুতের মতো লাফ দেয় সে...
...আর মোক্ষম টিপে শাবল বিঁধিয়ে দেয় পাঞ্জায়।
মুহূর্তে ঝড়বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে গর্জন ভেসে আসে বাইরের দাওয়া থেকে। সে ডাকছে। কাতরাচ্ছে যন্ত্রণায়, রাগে! আর...আর ক্রমে সে আর্তনাদ মিলিয়ে যাচ্ছে।
বাইরে এখন শুধু বৃষ্টির শব্দ। ভিতরে রক্তমাখা শাবলের ফলাটার দিকে চেয়ে চুপ করে বসে থকে সুবল, কিছু ক্ষণ।
মোম ফুরিয়ে আসায় ঘরের আলো কমে এসেছে। সে দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই ভিতরের ঘরের মুখে দাঁড়ানো কুমুকে দেখতে পায় সুবল। মাথায় চওড়া করে পরা সিঁদুর, হাতে শাঁখা-পলা। প্রায় বিস্রস্তবসনা। শুধু ডান হাতে একটা কাটারি তুলে স্থির চেয়ে আছে দরজার দিকে।
বড় ঝকঝকে সকাল! শেষ বোশেখের আলোয় মাখামাখি।
শহুরে বাবুদের নিয়ে পঞ্চায়েতের মইদুল এসেছে। সুবলের মাটির দাওয়ার বাইরে দাঁড়িয়ে তার হাতে চাল, ডাল, আলু, তেল তুলে দিচ্ছেন এক বাবু। কয়েকটা দুধের প্যাকেটও কি সে বস্তা থেকে উঁকি মারছে?
বাবু সুবলের কাঁধ চাপড়ে বলছেন, “কোনও ভয় নেই। তোমাদের সমস্ত খেয়াল রাখা হচ্ছে।”
চালের ছোট্ট বস্তাটা বুকে চেপে ধরে দু’হাত কপালে ঠেকায় সুবল।
ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল