আবার-সূর্য-উঠবে.md
আবার-সূর্য-উঠবে.md
মিঠি আর ঋক, কচি বর-বৌ দুটি। বেচারা দুজনেই এখন আটকে আছে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের চক্করে। কিন্তু সুন্দরগ্রামে যেমন দুর্বল নেট কানেকশন, তেমন খারাপ ভোল্টেজ। কাজকর্ম মাথায় ওঠার জোগাড়। তবে প্রকৃতি এখানে অকৃপণ। আর কী শান্তি-শান্তি একটা ভাব! এখন যেমন শেষ বসন্তের ঝিরঝিরে হাওয়ায় গন্ধরাজ আর জুঁইয়ের ম-ম গন্ধ। আর আজ তো পূর্ণিমার দুধে-ধোয়া রাত্রি।
মিঠির হাজার চেঁচামেচিতেও ঋকের পাত্তা নেই। অংশু বরং ছুটে এল হাঁপাতে-হাঁপাতে। একটা আঙুল উঁচিয়ে বলল, “আই থিংক, ব্রো এখন ওয়ার্ক ফ্রম ট্রি করছে। তখন বলছিল গাছের ওপরেই নেটওয়ার্কটা ভাল।”
এই ছেলেটা একটা যন্তর বটে। মিঠি দেওরের কথা শুনে হেসে গড়াল, বাতাস ওর উড়োঝুরো চুল নিয়ে খানিক খেলে ফেলল সেই সুযোগে। এই মেয়েও হাবেভাবে যেন কলেজগার্ল। জোরে জোরে কথা বলে, আর সব বিষয়েই অতি উৎসাহী।
আপনজনের এমন কলকলানি শুনতে কতই না আঁকুপাঁকু করতেন শুভময়বাবু আর মনোরমা। এত দিনে ইচ্ছাপূরণ হল। ছেলে, বৌমা, নাতি, নাতবৌ, একেবারে ফুল টিম হাজির। উপলক্ষ একটা আছে, তাঁর নব্বই বছরের জন্মদিন পালন।
সারা জীবন শুভময় চ্যাটার্জি যা সঞ্চয় করেছেন, অর্ধেকটাই ঢেলেছেন আর্তের সেবায় আর বাকি অর্ধেক বাড়িতে। তবে দেখার মতো তৈরি করেছেন আনন্দনিকেতন। সামনে-পেছনে বাগান, কোণের দিকে শ্বেতপাথরের রাধাগোবিন্দর মন্দির।
চা এসে গেল। এটা দ্বিতীয় রাউন্ড। সঙ্গে আচারের তেলে মাখা মুড়ি আর বেগুনি। বেগুনির গায়ে একটা করে পুরুষ্টু কাঁচা লঙ্কা গাঁথা।
মিঠির অফিসের কাজ শেষ হতেই সে লাফিয়ে এসে বসল আড্ডার মাঝখানে। ঋকও এল একটু পরে, মুখ গম্ভীর। গালে গতকালের দাড়ি। বলে, “নিউজ় শুনে এলাম। কাল থেকে লকডাউন। টানা একুশ দিন।”
মিঠি বেগুনিতে সবে এক কামড় বসিয়েছিল, মুখটা হাঁ হয়েই রয়েছে। অংশু কাঁধদুটো ঝাঁকিয়ে বলে, “হোয়াট! লকডাউন! লকআপ শুনেছি, প্রিজ়নারদের জন্য। তা হলে কি আমাদের আরও দুরবস্থা? একেবারে লকডাউউন!”
রসবোধ আছে ছোট নাতির। শুভময়বাবু মুচকি হাসলেন।
মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শাঁখ আর ঘণ্টার শব্দ ভেসে এল, সঙ্গে পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ। পরিবেশটা ধূপ-ধুনোর গন্ধে ভরে ওঠে। মনোরমা ঘোমটা টেনে হাতজোড় করে প্রণাম করলেন। দেখাদেখি বাকিরাও।
মনোরমা হেসে বলেন, “আহা, তোরা তো জলে পড়ে নেই। থেকে যা আর ক’দিন।”
কিন্তু ছেলে, সলিলের কপালে চিন্তার ভাঁজ। মাদুর থেকে উঠে সে পায়চারি শুরু করে দেয়। মুম্বইয়ে তার গার্মেন্টসের ব্যবসা। বছরদুই বিদেশের মার্কেটটাকে পুরোপুরি ক্যাপচার করে ফেলেছিল। এ মাসের শেষেই বড় বড় কিছু কনসাইনমেন্ট পাঠাবার কথা ছিল। গেল!
শুভময়বাবু ধীর স্থির মানুষ। প্রাণায়ামটা এখনও ধরে রেখেছেন। স্বল্পাহারী আর নিয়মনিষ্ঠ। নব্বই ছুঁই-ছুঁই বয়স, বোঝা যায় না। সকলের মুখে আলতো চোখ বুলিয়ে বলেন, “দুশ্চিন্তা কোরো না। ঝড় উঠেছে, থেমেও যাবে। তবে কবে থামবে, নিশ্চিত করে এখনই বলা যাবে না। ধরিত্রী মায়ের বুকে তো কম ছেনি, হাতুড়ি, শাবলের আঘাত পড়েনি! এ বার তাঁর রোষানলে পড়তেই হবে।”
অংশু মুখ সরু করে বলে, “ইয়ে গ্র্যান্ডপা, তুমি বড় কঠিন কঠিন কথা বলো! হোয়াট ইজ় রোষানল? ইজ় ইট রিভেঞ্জ! প্রতিশোধ! না, না...” মাথা দোলাতে থাকে ও, “মাদার আর্থ কখনও এত নিষ্ঠুর হতে পারে না। আফটার অল, মায়েরা সব সময়ই কুউউল।” অংশু শান্ত একটা ঢেউ ধরনের কিছুর ভঙ্গি করে সামনে একটা হাত ছড়িয়ে দিল।
নাতির কথায় দাদুর মুখে আবার স্মিত হাসি। নেহাতই নাবালক! অবশ্য সাবালকই বা কারা? তিনি বলেন, “ধরিত্রীকে সর্বংসহা ভেবে সকলেই তো নিত্যদিন সীমাহীন অত্যাচার চালিয়েছে! আজ সামলাও এই বিপর্যয়! তবে অংশু, ইউ আর রাইট। সন্তানের ধ্বংস, মায়েরা সইতে পারেন না। তাই হয়তো আজ তাঁকে এত কঠোর হতে হল, একেবারে খড়্গহস্তে শাসন করতে হচ্ছে। ভবিষ্যৎ যাতে শুভ হয়।”
সলিল পায়চারি থামিয়ে তার বাবার দিকে এগিয়ে আসে। স্ত্রীর কান বাঁচিয়ে বলে, “ব্যবসায় লক্ষ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করে বসে আছি বাবা। এ ভাবে লকডাউন চললে... ওফ্! ভাবতে পারছি না আর।”
ছেলের দিকে আবার শান্ত চোখে তাকালেন বাবা, “শোনো, যে কোনও বিপর্যয়ই আসে কিছু পরীক্ষা নিতে, কিছু শিক্ষা দিতে। ধৈর্য রাখো, মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হও।”
মিঠি এ বার আড্ডার বৃত্ত থেকে উঠে তার দাদাশ্বশুরের গা ঘেঁষে বসল, “ও দাদু, তোমার তো সিক্সটি ফোর জিবি মেমারি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখা মানুষ। তোমাদের সময়ের কিছু কথা শোনাও না।”
মেয়েটির কথাগুলো ভারী আহ্লাদী। নাতবৌয়ের মাথায় হাত রেখে তিনি হাসলেন, “শুনবে? ঠিক আছে, বলব।”
তার পরেই যেন ধ্যানস্থ হলেন চোখ বুজে। হয়তো স্মৃতিঘরের তালাচাবি খুঁজছেন, কত কালের কত ধুলো জমে আছে না-খোলা ঘরগুলোয়। তার পর আস্তে আস্তে শুরু করলেন, “জীবনে আমি একাধিক বিপর্যয় দেখেছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমি নেহাতই ছেলেমানুষ। হয়তো ছাদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছি, হঠাৎ শুনি সাইরেন। শত্রুপক্ষের প্লেন ধেয়ে আসছে, পালাও পালাও। নিমেষে সকলে দৌড়ে একতলায়। সে সময় কলকাতার ফাঁকা রাস্তাগুলোয় বড় বড় ট্রেঞ্চ খোঁড়া হত। হয়তো কেউ হেঁটে যাচ্ছে, সাইরেন বেজে উঠলেই তাকে সিভিক গার্ডরা প্রায় জোর করেই ট্রেঞ্চের ভেতর ঢুকিয়ে দিত। এর পর অল ক্লিয়ার সাইরেন
বাজলে, সেই গর্ত থেকে তাকে বার করে আনা হত।”
“ওহ মাই গড! তোমাকে কখনও ওই ট্রেঞ্চে ঢুকতে হয়েছে গ্র্যান্ডপা?” অংশু বেশ চিন্তিত।
“বহু বার। বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরছি হয়তো, হঠাৎ সাইরেন, ব্যস... অবস্থা তখন এমনই ভয়ঙ্কর, কলকাতা ছেড়ে পালাচ্ছে সবাই। সন্ধের পর শহর অন্ধকার, হ্যারিকেনের গায়ে কালো কাগজ সাঁটা। এমনকি দুধসাদা ভিক্টোরিয়াকেও আলকাতরা দিয়ে কালো করে রাখা হল।” শুভময়বাবু থামলেন একটু, “এর পর আরও এক বীভৎসতা। জানো নিশ্চয়ই, উনিশশো তেতাল্লিশের মন্বন্তর। চার দিকে লোকের আর্ত চিৎকার, ‘মাগো, বড় খিদে, একটু ফ্যান দাও।’ কী নিদারুণ কান্না! ভাবলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়! সে সময় নিজের চোখে দেখেছি প্রেতমিছিল, শত শত কঙ্কালসার মৃতদেহ পড়ে আছে কলকাতার রাস্তায়।” স্মৃতি যেন ভেসে উঠল চোখের পর্দায়। শিউরে উঠে চোখ বুজলেন তিনি।
“ওহ মাই গড! এ সব শুনলে গা শিরশির করে গো দাদু!” মিঠি চোখ বুজে ফেলেছে।
“তা হলে এ গল্প থাক বরং!” শুভময়বাবু হাসলেন।
“নো, নো, গ্র্যান্ডপা, ইউ ক্যারি অন!” অংশু হঠাৎ খুব সিরিয়াস, “হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেল্ফ, আমাদের সব জানা উচিত।”
“ঠিক, ইতিহাস জানতে হয়, ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়,” শুভময়বাবু নাতির পিঠ চাপড়ে দিলেন। “তার পর শোনো, এই খাদ্যসঙ্কটের সঙ্গেই এল বস্ত্র সঙ্কট। সারা শহর থেকে শাড়ি, জামা কাপড় উধাও। এক দিন ঘোষণা হল, পরিবার পিছু একটি করে মিলের শাড়ি দেওয়া হবে রেশন কার্ড দেখালে। শুরু হল লম্বা লাইন, রাত তিনটে থেকে লোক দাঁড়িয়ে। আমি ছেলেমানুষ, শক্তিমানদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলিতে যুঝতে পারি না। তাই রোজই খালি হাতে বাড়ি ফিরি। এ দিকে মায়ের পরনের শাড়িতে একাধিক রিফু, এক দিক টানলে, অন্য দিক ফেঁসে যায়...” গলাটা তাঁর ধরা ধরা শোনাল। হাত বাড়িয়ে বোতল থেকে একটু জল খেলেন।
“এক দিন শুনলাম, বাড়ির সামনে বান্ধব বস্ত্রালয়ে এক ট্রাক শাড়ি ঢুকবে। তবে লুঠ হওয়ার একটা কানাঘুষোও চলছে। রাত তখন প্রায় দশটা। শুনশান রাস্তা। আমি চুপিচুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে অলিগলি ধরলাম। দোকানের সামনে গিয়ে দেখি, সত্যিই মাল নামছে। গুটিগুটি সামনে দাঁড়াই। যে ছেলেটি মাল গোছাচ্ছে, আমায় দেখে অবাক। আমার ইচ্ছের কথা শুনে ইশারায় বলে, মালিককে ধরো। ম্যানেজ হয়ে যাবে। কিন্তু মালিকের সামনে এগোতেই, বিশাল এক ধমক। তবু নড়লাম না। সে এ বার চোখ পাকিয়ে বলে, ‘লাইনে দাঁড়িয়ে শাড়ি নিবি কাল।’ আমার চোখ ফেটে জল। বলি, মায়ের শাড়িটা জায়গায় জায়গায় ছিঁড়ে গেছে, চোখে দেখা যায় না। বিশ্বাস করুন, লাইন দিয়েও আমি... খানিকটা নরম হল সে এ বার। বলল, ‘পয়সা এনেছিস?’... না। তবে এক ছুটে নিয়ে আসতে পারব।”
“তার পর?” মিঠি টেনশনে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
“পয়সা নিতে বাড়ির দিকে ছুটেছি, মাঝপথে দেখি বাবা, ডিউটি সেরে হা-ক্লান্ত শরীরে ফিরছেন। পয়সা চাইতেই বহু প্রশ্ন, তবে
দিয়েও দিলেন। কিন্তু তার পর যখন দোকানে পৌঁছলাম...”
“কী? ঝাঁপ বন্ধ! পেলে না এ বারও?” এটা সলিলের প্রশ্ন। তার গলাতেও উৎকণ্ঠা।
শুভময়বাবু করুণ করে হাসলেন, “সত্যিই তাই। ঝাঁপ পড়ে গেছে। নির্বাক তাকিয়ে রইলাম। মায়ের শতছিন্ন শাড়িটা দুলছে চোখের সামনে। গ্নানি হল। ছিঃ! আমি কত অপদার্থ ছেলে। হঠাৎ উন্মাদের মতো দুমদুম ধাক্কা দিতে শুরু করলাম দরজায়। কর্মচারীটি কাছেপিঠেই ছিল বোধহয়। আমায় দেখে অবাক। বলে, ‘মালিক তো তালা লাগিয়ে চলে গেল। কাল আসিস বরং।’ আমি বেপরোয়া, না, আজই চাই। আমার চোয়াল শক্ত, চোখে আগুন। ছেলেটি কী বুঝল কে জানে, নিঃশব্দে দোকানের পেছন দিকে আমায় নিয়ে চলল। বলল, ‘একটা শাড়ি রেখেছিলাম আমার মায়ের জন্য। ওটা নিয়ে পালা, কেউ যেন না দেখে।’ তা হলে তোমার মা? ছেলেটি চোখ পাকাল, ‘বললাম না, পালা!’ এ বার আমার চোখদুটো যেন পাড়-ভাঙা নদী। কান্না থামতেই চায় না। সে দিনই বুঝেছিলাম, যত বিপর্যয়ই আসুক, কিছু মানুষের বিবেকের মৃত্যু ঘটে না।”
“তার পর? তার পর?” অংশুর আর তর সইছে না।
“সে রাতেই মা ওই নতুন শাড়ি পরে মিটমিটে লম্ফর আলোয় এসে দাঁড়ালেন। আহা, আমি হতবাক, হয়ে পড়েছিলাম! আমার মা এত সুন্দর! মনে আছে ওই শাড়ি পরেই মা অত রাতে রাঁধতে বসেছিলেন। খিচুড়ি আর আলুর চোকলাভাজা।”
গল্প শেষ। এক সময় চ্যাটার্জি পরিবারে ডিনারও শেষ হল। খাওয়ার পর সবাই হাঁটতে বেরিয়েছে জ্যোৎস্না নিকোনো বাগানে। সলিল অন্যমনস্ক। মাথায় এখনও ব্যবসার হিজিবিজি। কেন যে এ বার এত মাল স্টক করল গোডাউনে? লোভ, লোভ, অতি লোভ! তখন কে জানত, হঠাৎ লকডাউনে পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে যাবে!
হঠাৎ বাতাসে একটা মৃদু সুর। ভাল করে শুনবে বলে সলিল কান পাতে। বাবা গাইছেন, প্রার্থনাসঙ্গীত। রোজই গান। শুতে যাওয়ার আগে। মা-ও গলা মেলান।
একটা গাছের নীচে দাঁড়ায় সে। একটা পাখি শিস দিয়ে উঠল না! কিন্তু রাত তো এখনও বাকি। ওই তো আবার ডাকছে, টুই টুই টুই... শুভময়বাবুর গানের সঙ্গে যেন সুর মিলিয়ে শিস দিচ্ছে।
বাতাসে মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ। সব কুঁড়ি কি এখনই ফুল হয়ে ফুটে উঠল? বকুলের গন্ধ আসছে, কয়েকটা কুড়িয়ে নেবে? না, না। গাছেরা হয়তো প্রথম ফুল ঝরিয়ে ভূমিকে নিবেদন করল। সলিলের অবাক লাগে। এ রকম ভাবে সে কোনও দিন ভেবেছে!
আর এই যে পাখি, গাছ, ফুল... এদের এমন থইথই সুখের উৎস কোথায়? যেখানে যত যুদ্ধই হোক, যত লকডাউনই চলুক, কিচ্ছু আসে যায় না যেন ওদের। আকাশ, বাতাস, মাটি, রৌদ্র, ছায়া, এ সব নিয়েই যেন ওরা সবাই দেদার সুখী।
একটা অদ্ভুত ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে সলিলের মনে। যে গুচ্ছের শাড়ি জামাকাপড়ে সে তার স্টোর ভর্তি করেছে, এ বার যদি তার কিছু কিছু বিলিয়ে দেওয়া যায় নিঃস্ব মানুষদের মধ্যে! সামনেই তো পয়লা বৈশাখ, বচ্ছরকার দিন। মা বলেন, ওই দিন একটা নতুন সুতো হলেও গায়ে চড়াতে হয়...
গল্প করতে করতে সবাই এগিয়ে গিয়েছে বাগানের অন্য দিকে। সলিল তবু দাঁড়িয়েই রইল। এখানটায় বড্ড শান্তি। আজ সবার পিছনে থেকেও নিজেকে এক ফোঁটা হেরো মনে হচ্ছে না তো! বরং নির্ভার লাগছে খুব।
জীবন মাঝে মাঝে অপশন দেয়। বিভ্রান্ত মানুষের দিকে বাড়িয়ে দেয় দুটো আঙুল— এক আঙুলে সেই কাপড়ের সঙ্কটের সময়কার কাপড়ের দোকানের মালিক, আর অন্য আঙুলে সেই দোকানের কর্মচারী— কোনও একটা বেছে নিতে বলে। আজ আর ঠিক আঙুলটা বেছে নিতে ভুল করবে না সলিল।
পাখিগুলোর বুঝি আজ ঘুম নেই। ভোর হল না, অথচ সাত সুরে জলসা বসিয়ে দিল! আচ্ছা, ওদের কাছে কি খবর আছে, রাত শেষ হয়ে ভোরের আলো ফুটে উঠতে আর দেরি নেই!