Skip to content

Latest commit

 

History

History
265 lines (181 loc) · 24 KB

অন্য-হৃদয়-শাশ্বতী-নন্দী.md

File metadata and controls

265 lines (181 loc) · 24 KB

অন্য হৃদয়

শাশ্বতী নন্দী


মিস পপি, আপনি এখন কোথায়?” মোবাইলে রাঘবনের গমগমে গলা।

“আমি পপি নই স্যর, পাপড়ি চৌধুরী।”

“ড্যাম ইট! পপি অ্যান্ড পাপড়ি আর সেম টু মি। এত লেট হচ্ছে কেন অফিস ঢুকতে?”

পাপড়ি ঢোক গিলল। কী জ্বালাতন! যবে থেকে এই রাঘবন ম্যানেজার হয়ে জয়েন করেছে, অফিস একেবারে তোলপাড়। সকলের কাছে ও একটা ত্রাস। কেরলের ছেলে, তবে বাংলা বলে দুরন্ত।

পাপড়ি মিনমিন করে, “জ্যামে আটকে আছি স্যর। হোপফুলি বারোটার আগেই পৌঁছব।”

“হোপফুলি বারোটা! কী ক্যাজ় আপনি! অফিস আওয়ার্স ক’টায়... কী সব মনে করেছেন আপনারা!” পিলে চমকানো একটা ধমক দিয়ে লাইন কেটে দিল রাঘবন।

অপমানে ওর মুখ থমথমে। কপালের রগ টিপে মাথা নিচু করে বসে আছে। বাড়ি থেকে তো বেরিয়েছে কোন সকালে! কিন্তু এই জ্যাম-জটের জেরে… লোকটা এত অবুঝ! শুধু কাজ আর কাজ। আর মাথায় সব সময় যেন একটা ফার্নেস জ্বলছে। যদিও ট্যালেন্ট সাংঘাতিক। খড়্গপুর আইআইটির পাসআউট। বয়সও ত্রিশের সিঁড়ি বাইছে। অফিসের সবাই বলে ‘হাইব্রিড প্রোডাক্ট’। বাবা কেরলের, মা বাঙালি, মাথাটা সলিড।

আবার মোবাইল বাজছে। নিশ্চয়ই রাঘবন! উহ্ অসহ্য!

“লিসন পাপিয়া...”

“পা-পা-পাপড়ি, স্যর!”

“হোয়াটএভার। আজ একটা আর্জেন্ট ক্লায়েন্ট মিটিং আছে। ভিসি-তে বসাব আপনাকে।”

“ভিডিয়ো কনফারেন্স! ও পারে কারা থাকবে স্যর?”

“যারাই থাকুক, এ পারে আমি থাকব সঙ্গে। ভয় নেই।”

“একটা কথা বলব স্যর?”

“ইন ব্রিফ।”

দু’বার কাশল পাপড়ি, “গতকাল অন সাইট থেকে রাত বারোটায় জিমির একটা কল নিয়েছিলাম।”

“তাতে কী হল?”

“যে প্রেজ়েন্টশনটা রেডি করতে বলেছিল, অন টাইম রেডি করে সাবমিট করে দিয়েছি।”

“জানি, কিন্তু ওটা একটা প্রেজ়েন্টেশন হয়েছে?” আবার একটা বিষাক্ত তির, “ব্যাকগ্রাউন্ড এত চকচকে, কালারফুল! ছিঃ! ফন্ট সাইজ়েরও প্যারিটি নেই! ক্লায়েন্ট তো ফিউরিয়াস। জিমি ভোর চারটেয় আমাকে কল করেছে। এ রকম করলে কিন্তু ইউ উইল বি ফায়ার্ড।”

অ্যাঁ! কী বলল! যেন আচমকাই সূর্য নিভে গেল। চার পাশ অন্ধকার। এ বাজারে চাকরি গেলে খাবে কী? বাবা সদ্য চলে গেছেন। ফ্ল্যাটের কিস্তি শোধ হয়নি। তার এডুকেশন লোন, তাও ঝুলছে। মায়ের ডায়ালিসিস সপ্তাহে তিন দিন।

“এখন কোথায় আছেন আপনি? গাড়ি ছেড়েছে?”

“নো স্যর।”

“ওহ্‌ ডিসগাস্টিং!” রাঘবনের গলায় একটা ঘড়ঘড় শব্দ। তার পরেই ফোন কেটে গেল।

পাপড়ি অসহায়। করণীয় তো কিছু নেই। বসেই আছে। চোঁয়া ঢেকুর উঠছে। সকাল সকাল লুচি আর পায়েস খাওয়ার এফেক্ট। মা আজ প্লেটে সাজিয়ে দিয়েছিল, মেয়ের জন্মদিন কিনা!

উফ, পাশে বসা ছেলেটা এমন গাঁকগাঁক চেঁচাচ্ছে কেন মোবাইলে? কানে বিঁধছে কথাগুলো, “আরে ডুড, রাস্তা জ্যাম! এ দিকে বস হুড়ো দিচ্ছে। এক বার অফিস পৌঁছোই, দেখ কী করি! যখন অপোনেন্ট কোনও ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝবে না, তাকে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বোঝাতে হবে।”

পাপড়ি নড়েচড়ে বসল। চাবুক ছেলে তো! কিন্তু মুখখানা যেন ভালমানুষের পো। ধুস, অধৈর্য লাগছে। কখন অফিসে পৌঁছবে, কখনই বা মিটিং নেবে!

তখনই মোবাইলে আবার রিংটোনের মড়াকান্না। ও মাই গড! আবার রাঘবন।

“পাপড়ি!”

“ইয়েস স্যর।”

“আপনি যদি আজ ক্লায়েন্টকে ইম্প্রেস করতে পারেন, তা হলে অনসাইট যাওয়ার একটা সুযোগ মিলবে। তবে সেটার জন্য আর একটু সময় লাগবে। তা ছাড়া কাজের কোয়ালিটিও এ ক্ষেত্রে ম্যাটার করে। তবু আজ একটা ইন্ট্রোডাকশন হয়ে যাক আমার সামনে।”

“থ্যাঙ্ক ইউ স্যর, বাট আমি কলকাতা ছেড়ে যাব না। মা একা। বাবা সদ্য চলে গেছেন।”

রাঘবন জিবে চুকচুক শব্দ করল, “সো স্যরি, সো স্যরি। আচ্ছা আপনার যখন এত লেট হচ্ছে, আমি প্রেজ়েন্টেশনটা নিয়ে বসছি। একটু মডিফিকেশন করলেই... তবে পরের বার থেকে বি কেয়ারফুল। নিজেই সুন্দর করে তৈরি করবেন। এনিওয়ে, এখন কত দূর?”

“একই জায়গায় স্যর, গাড়ি এখনও ছাড়েনি।”

“দেন গো ব্যাক হোম, গো ব্যাক। অফিসে আসতে হবে না!” হঠাৎ যেন রাঘবন খেপে উঠল। ফোনেই তারস্বরে চেঁচাচ্ছে।

পাপড়ি হতভম্ব। কী হল? এই তো ভাল ভাল কথা বলল এত ক্ষণ! লোকটার টেম্পারেচারটা তো মাপাই যাচ্ছে না! ওর সারা শরীর কাঁপছে। সত্যিই বাড়ি ফিরে যাবে? চাকরিটা গেল তা হলে! কিন্তু আজই? জন্মদিনের দিন? বাবাকে মনে পড়ছে।

এ দিনটা এলে ধান-দূর্বা দিয়ে মেয়েকে আশীর্বাদ করতেন। বলতেন, “জীবনে চড়াই-উতরাই থাকবেই, ঘাবড়াস না। সৎ থাকবি, নিষ্ঠা রাখবি। স্বীকৃতি আসবেই। টুডে অর টুমরো। এই পৃথিবীটা পুরোপুরি অসতের দখলে চলে যায়নি, ভাল লোকের আসন শূন্য হয়নি। এক জন যাবে, অন্য জন আসবে।”

হঠাৎ তাদের শাটলটা গোঁ-গোঁ শব্দ করে উঠল। ও মা, ড্রাইভার স্টার্ট দিচ্ছে যে! সামনের গাড়িগুলোও এগোতে শুরু করেছে। হুর্‌রে!

ঠিকঠাক ছুটলে বারোটার আগেই... রাঘবনকে ফোন লাগাবে? অনুনয় করে কথা বলবে। শুনলে হয়তো বরফ গলবে। কিন্তু রিং হয়ে যাচ্ছে তো। এক বার, দু’বার, তিন বার। নো রেসপন্স। তার মানে? নিশ্চিত চাকরি গেল। তা হলে আর কী, ফিরতি শাটলে মায়ের কাছে।

মায়ের কথা ভাবতে ভাবতেই মায়ের ফোন। দুঃখেও হাসি ফোটাল গলায়, “হ্যাঁ হ্যালো, মা বলো।”

“আজ কিন্তু বাইরে কিছু খাওয়াদাওয়া করিস না। বাড়িতে গোবিন্দভোগ চাল আছে। পোলাও রাঁধব। কখন ফিরবি?”

ইচ্ছে করছিল বলতে, ‘এই তো, এখনই। অফিসের পাট চুকে গেল।’

কিন্তু ভিতু মানুষটাকে আর ভয় দেখিয়ে কাজ নেই।

ড্রাইভার একেবারে উড়িয়ে চালাচ্ছে। এর মধ্যে আরও দু’বার ফোন হয়ে গেল রাঘবনকে। না, ও পাশটা এখনও নীরব।

পাপড়ির নিঃশ্বাস দ্রুত চলছে। বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটার শব্দ। অস্থির লাগছে। রাঘবনের খাস এক জন লোক ছিল না? অনিলদা। বয়স্ক মানুষ। পাপড়িকে খুব স্নেহ করেন। নম্বরটা আছে।

“হ্যালো অনিলদা।”

“হ্যাঁ, দিদিভাই বলুন।”

“স্যর কোথায়? ফোন করে করে পাচ্ছি না।”

“ওরে বাবা! আজ পাবেনও না। মাথা এখন ফোরফট্টি ভোল্ট। ধমকে চমকে রাখছে সবাইকে।”

“কেন অনিলদা?”

“কী করে বলি! আদার ব্যাপারী, জাহাজের খবর রাখি না।”


গেটে ঢুকতেই একটা বিরাট ধাক্কা। সিকিয়োরিটি ছুটে আসছে, “ম্যাডাম, এক মিনিট। থার্ড ফ্লোরে যাবেন না, সেকেন্ড ফ্লোরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন রাঘবন স্যর।”

সে কী! পা দুটো থরথর কেঁপে উঠল। নিজের ঘর পর্যন্তও যেতে দেওয়া হবে না? লিফ্ট থেকে নামতেই মুখোমুখি অনিলদা। ও মা, অমন মুখ ঘুরিয়ে নিলেন কেন? না কি মনের ভুল?

মুখ-চোখ ফ্যাকাশে হয়ে আসছে ওর। কাচের দরজার বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে, বস ল্যাপটপে নিমগ্ন। পরনে হালকা নীল শার্ট, ডিপ ব্লু টাই। এমনিতেই হ্যান্ডসাম, আজকে যেন আরও ঝকঝকে।

“মে আই কাম ইন স্যর?” দরজা দিয়ে অর্ধেক শরীর ঢুকিয়ে দিয়েছে পাপড়ি। হাঁটুর কাঁপাকাঁপি সামলানোই যাচ্ছে না ছাই!

চোখ না তুলেই রাঘবন মাথা নাড়ে, “ইয়েস কাম ইন।” তার আঙুল এখন কি-বোর্ডে ঝড় তুলছে।

মিনিট খানেক কাটল। এক সময় চোখ তুলল রাঘবন। মুখটা হাসি-হাসি, “প্লিজ় বি সিটেড পপি, স্যরি পাপড়ি| হাতের কাজটা একটু সেরে কথা বলি?”

ও বলির পাঁঠার মতো মাথা নাড়ে, “ওকে স্যর, ওকে, ওকে...”

কম্পিউটারে তার টার্মিনেশন লেটার রেডি হচ্ছে, এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। হোক। নিঃশ্বাস আটকে ও বসে রইল।

এ কী! তার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে করমর্দন করতে চাইছে কেন রাঘবন? একেই কি বলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক! বিদায়ের আগে...

বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। মনে দার্শনিক-দার্শনিক ভাব। রবীন্দ্রনাথ কী যেন লিখে গেছেন, ‘শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা।’ হ্যাঁ, জীবন তো একটা স্রোতই। কোথাও থিতু হতে নেই। সে প্রস্তুত। ভেসে চলে যাবে অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে। কাঁপা কাঁপা হাতটা রাঘবনের দিকে বাড়িয়ে দিল সৌজন্যবশত।

“মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অব দ্য ডে পাপড়ি। জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।”

কী! চমকে তাকায় ও! ঠিক শুনল কি? ও মা, রাঘবন অমন ঠোঁট ছড়িয়ে হাসছে কেন? আবার নিজের মোবাইলটাও এগিয়ে দিচ্ছে, “পাপড়ি, একটা ফোন করুন তো আপনার মা-কে।”

“কেন?” ঢোক গিলল পাপড়ি।

“আজ আমি আপনার মাকে একটু কনগ্র্যাচুলেট করতে চাই।”

“কনগ্র্যাচুলেট! আমার মাকে! কেন স্যর?” এই লোকটার হেঁয়ালি ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

“ওঁর জীবনে আজ একটা অন্য রকম দিন, তাই। আজ তো ওঁরও জন্মদিন। মাতৃত্বের জন্মদিন। কারণ ইউ হ্যাভ নো সিবলিংস। আজই তাঁর জীবন আমূল পাল্টে গিয়েছিল। তাই একটি বার অভিনন্দন জানাব না? জানেন তো আপনারা মেয়েরাই পারেন, মায়ের ঋণ খানিকটা শোধ করতে।”

“কী ভাবে স্যর?” বোকার মতো কেন যে প্রশ্নটা করল। বুদ্ধি আর কবে হবে তার?

হাসছে রাঘবন, “দশ মাসের ফেজ়টা যদি ছেড়েই দিই, কিন্তু ওই যে সন্তানের জন্মের বিশেষ ক্ষণটি, যখন এক মা অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে শিশুকে জন্ম দেয়, আলোর পৃথিবীতে নিয়ে আসে, তা কি এক জন বাবা পারে? বলুন, পারে?” এক নাগাড়ে বলতে বলতে রাঘবন হাঁপাচ্ছে, “জানি, অনেকেই তর্ক তুলবেন। বলবেন, মেডিক্যাল সায়েন্স এখন অনেক উন্নত। সে দিন আর নেই। এখন অনেক পেনলেসলি একটি সন্তানের জন্ম হয়। তবু আমি বলব, এই বিশেষ দিনে সন্তানের সঙ্গে সঙ্গে তাঁকেও স্যালুট করা উচিত। কী, ভুল বলছি?”

পাপড়ি হতভম্ব। তার সামনে এ কে কথা বলছে?

দম নেওয়ার পর আবার তোড়ে কথা শুরু করেছে রাঘবন, “জানেন, এই ভাবনাটা আমার মনে প্রথম কে ঢুকিয়েছিল? আমার বাবা। ইয়েস, মাই ফাদার। অবাক হচ্ছেন? কিন্তু কেন? আরে, পুরুষমানুষ হলেও তো তিনি এক জন মায়ের গর্ভেই জন্মেছিলেন।”

পাপড়ির বুকে এত জলোচ্ছ্বাস কোথা থেকে আসছে? কত কত ঢেউ উঠছে, ভাঙছে। আপন মনেই বলে ফেলে, “যখন পুরুষ এ ভাবে চিন্তা করে, তখনই তো নারী সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি পায়।”

“বাহ্‌! দারুণ বললেন তো। আপনি কিন্তু মোটামুটি ইনটেলিজেন্ট। যাক, ফোনটা করুন। আমি ওঁকে উইশ করব।”

“স্যর, আমার মা নার্ভাস ধরনের মানুষ। হুট করে এমন ফোন পেলে... বরং আমি বাড়ি ফিরে সব বলব। উনি খুশি হবেন।”

“ও তাই! ওকে দেন। তা হলে এ বার আপনি রুমে যান।”

লিফ্ট থেকে নেমেই থার্ড ফ্লোরের চার পাশটা দেখে ও অবাক। এমন অন্য রকম কেন ? ও মা, ওর কিউবিকলটার ভোলই যে পাল্টে গেছে। বেলুন আর গ্রিটিংস কার্ডে কে এমন সাজিয়েছে!

হঠাৎ পিছনে একটা উল্লাস, “হ্যাপি বার্থডে পাপড়ি!”

ঘাড় ফিরিয়েই অবাক, এ কী! পিছনে যে তাদের প্রজেক্টের পুরো টিম। পাপড়ির চোখে এ বার বিন্দু-বিন্দু শিশির। এ সব কী করে সম্ভব?

দু’হাতে দুটো ঢাউস গিফ্ট প্যাকেট নিয়ে এ বার এগিয়ে আসছে রাঘবন। হাসতে হাসতে বলে, “একটা সুন্দর কথা আছে না বাংলায়। ছোটবেলায় মা প্রায়ই শোনাত, ‘শাসন করা তারেই সাজে…’ তার পর? যাহ আর মনে পড়ছে না তো। হোয়াট নেক্সট?”

পাপড়ির কাঁপা কাঁপা স্বর, “সোহাগ করে যে!”

“ইয়েস। শাসন করা তারেই সাজে, সোহাগ করে যে। শুনুন, আমি শুধু এ অফিসের টেরর নই, আপনাদের খুব কাছেরও। আপনাদের অন্তর থেকে ভালবাসি। সবার ডেট অব বার্থ আমার নোটপ্যাডে সেভড। বায়োডেটা থেকে তুলে রেখেছি। তাই এখন থেকে, সবার জন্যই হবে এই সেলিব্রেশন।”

কথা বলতে বলতে হঠাৎ থমকে গেল রাঘবন। তার পর ঘড়ির দিকে তাকিয়েই এক লাফ, “ওহ নো! এখনই ক্লায়েন্ট মিট শুরু হবে। হারি আপ, হারি আপ পপি।”

“পা-পা-পাপড়ি, স্যর।”

“ওহ, ডোন্ট স্ট্যামার! ভয় পেলেই আপনি তুতলে কথা বলেন। এ রকম হলে কাজে ভুলভ্রান্তি হবে। কিন্তু থামলে চলবে না। মনে রাখবেন, আজকের মিটিংটা খুব ভাইটাল। আপনাকে কিন্তু স্টেডি থাকতে হবে। ল্যাডারে জাস্ট পা রেখেছেন। উপরে উঠতে হবে, অনেক, অনেক…”

রাঘবন অনর্গল বলেই চলছে। পাপড়ি কিছু শুনছে, কিছু শুনছে না। আসলে ও এখন খুঁজছে। এখান থেকে তো আকাশ দেখা যায় না, কিন্তু মনে মনে বাবাকে ডেকে আনল ও চোখের পাতায়। বিড়বিড় করে বলে, “জন্মদিনের আশীর্বাদটা তুমি এ ভাবে পাঠিয়ে দিলে বাবা? আমি খুব খুশি। সত্যিই, ভাল মানুষ, ভালবাসার মানুষ এখনও ফুরিয়ে যায়নি এই পৃথিবী থেকে। আর শূন্যস্থান বলেও কিছু নেই। এক জন যায়, আর এক জন ফিরে আসে।”